কোভিড আতঙ্ক ২০২০ তে গ্রাস করেছিল গোটা দুনিয়াকে। এক ভাইরাসের দাপটে কত সহস্র মৃত্যু দেখেছে বিশ্ব। এছাড়াও হার্টের অসুখ থেকে ডায়াবেটিস, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই কত মানুষের মৃত্য ঘটছে। কিন্তু চিন্তায় ফেলবে WHO-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন "From Loneliness to Social Connection"। হু-এর রিপোর্টে সামনে এসেছে এমন এক সমস্যা, যার জম্য প্রতিদিন বিশ্বে প্রতি ঘন্টায় ১০০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। সেই বড় সমস্যাটি হল একাকীত্ব। এ এমন এক বিপজ্জনক অসুখ যা এড়াতে পারছেন না বহু মানুষই। শেষ হয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণ।
WHO-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, একাকীত্ব কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের উপরই প্রভাব ফেলে না, বরং শরীরের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। নতুন গবেষণা অনুসারে, কোভিড-১৯ মহামারীর পর এই সমস্যা আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা বলছে, তরুণদের মধ্যে এবং শহরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকেদের মধ্যে একাকীত্বের সমস্যা বাড়ছে।
জার্নাল অফ ফ্যামিলি মেডিসিন অ্যান্ড প্রাইমারি কেয়ারে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে, করোনা অতিমারীর সময় ভারতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরাঞ্চলে এই সংখ্যাটি আরও উদ্বেগজনক। সেখানে ২২% মানুষ একাকীত্ব অনুভব করছেন। প্রতিবেদন অনুসারে, ১৬-২৪ বছর বয়সী ৪০% যুবক একাকীত্ব বোধ করছেন। ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সের মানুষের ২৯ শতাংশের চেয়েও বেশি একাকীত্বের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন।
ভারতে একাকীত্বের সমস্যা কোথায় দাঁড়িয়ে
ভারতে একাকীত্ব সংক্রান্ত সংস্যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের ১০.১% মানুষ একাকীত্বের সঙ্গে লড়াই করছে, এবং শহরাঞ্চলে এই সমস্যা আরও বেশি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিড-১৯-এর পরে সামাজিক দূরত্ব এবং ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধির কারণে একাকীত্বর যন্ত্রণা বেশি গ্রাস করছে মানুষকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ছোট পরিবার, নগরায়ন এবং ব্যস্ত জীবনযাত্রার জন্য এই সমস্যাটি গুরুতর হয়ে উঠছে। দিল্লি, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুর মতো মেট্রো সিটিতে যুবকদের মধ্যে মানসিক চাপ এবং একাকীত্বের সমস্যা বেড়েছে।
WHO-এর মতে, একাকীত্ব হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, এটি স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ডিমেনশিয়া এবং আলঝাইমারের মতো রোগের সাথে যুক্ত। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশাল প্রভাব ফেলে। এর ফলে হতাশা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। একাকীত্বর সঙ্গে লড়াই করা মানুষরা শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্তরেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
দিল্লি এইমসের চিকিৎসক ডাঃ সঞ্জয় রাই বলেন, একাকীত্ব কমাতে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এবং সামাজিক যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের ভেতরে থাকার পরিবর্তে, পার্কে হাঁটা বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। একই সঙ্গে, তরুণদের স্ক্রিন টাইম কমিয়ে অফলাইন কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করায় উৎসাহিত করেছেন চিকিৎসক। বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা একাকীত্বজনিত অসুখে আক্রান্ত হন বেশি।